রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাজবন বিহারে লক্ষাধিক পুনার্থীদের দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব তিনদিন ব্যাপী জগদাত্রী মেলা রাঙামাটি শহরে উপচে পড়া ভীড় ।বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুক্রবার সমাপ্তি । এদিন দুপুরে উপাসক-উপাসিকাদের পঞ্চশীল প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এ মহাপুণ্যানুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর বিকাল ৩টায় বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে চীবর তৈরির কাজ উদ্বোধন করেন চাকমা রাণী য়েন য়েন রায়। এ সময় চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীসহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। রাঙামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে।
আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর প্রধান সেবিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, বুনন, সেলাই রংকরণ শেষে এ দানযজ্ঞের সম্পাদন করেন। ১৯৭৩ সালে বৌদ্ধধর্মীয় মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের জীবদ্দশায় তাঁর স্বর্গীয় অনুভুতিতে রাঙামাটি রাজবন বিহারে সর্বপ্রথম বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসবের আয়োজন করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় রাজবন বিহারে এবারের ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উড়িয়ে তা সম্পন্ন হবে। দু’দিনব্যাপী এ ধর্মীয় উৎসবে ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, বুদ্ধপূজা, পিন্ডদান, বুদ্ধমূর্তিদান, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, কঠিন চীবর উৎসর্গ, হাজারবাতি দান, পঞ্চশীল প্রার্থনাসহ ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবে বৃহস্পতিবার থেকে রাঙামাটি রাজবন বিহারে অগণিত পুণ্যার্থীর ঢল নামে।
এদিকে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এ মহাপূণ্যযজ্ঞ সম্পন্ন করতে রাঙামাটি শহরে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদারের পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা পুলিশ।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের রাজবাড়ি জিমনেসিয়াম চত্ত্বর হতে রাজবন বিহারের মুলগেট পর্যন্ত মেলা বসে। এবার মেলা চলাকালে রাতে রাঙামাটি মারী স্টেডিয়াম ও তার আশেপাশে বখাটেরা যাতে কোনো রকম অপকর্মে লিপ্ত হতে না পারে, সেজন্য বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাতব্যাপী তালা দিয়ে স্টেডিয়াম গেট বন্ধ রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
অপরদিকে প্রতিবছর ন্যায় এই বারও ৩দিন ব্যাপী জগদাত্রী মহাৎসব উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী মেলা বসছে, সড়কের এক পাশে সাড়ি সাড়ি পন্যর বনরুপা বাজার পযর্ন্ত দীর্ঘ লাইন উপচে পড়া দর্শকদের ভীড়ে সিএনজি /অটোরিকসার বিরম্ভব না । প্রায় দুই হাজার অধিক সিএনজি সড়ক পারাপার করতে পারছে না মেলার আগত দর্শকরা । মেলায় নিয়ে আসা পেন্ট শার্ট বিভিন্ন কাপড়ের ভাসমান দোকানদার গাজীপুর,নারায়ণ গঞ্জ থেকে আসা আবুল হোসেন,শামীম,বাবু জানায়,আমরা প্রতিবছর রাঙামাটিতে জগদাত্রী মেলায় আসি। চট্টগ্রাম থেকে আসা নুরু,জাকির জানায়,বিক্রি বনরুপা একটু কম তবে সামনে দিকে বিক্রি বেশী। সেলিম জানায়,আমার তিনটি দোকানে প্রচুর বিক্রি হচ্ছে শার্ট ও পাঞ্জাবী ।
পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, প্রতিবছর উৎসবে রাজবন বিহারে বিপুল মানুষের সম্মিলন ঘটে। উৎসবে যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না ঘটে রাজবন বিহারসহ আশেপাশে এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। প্রধান সড়কের উভয় পাশে মেলা বসাতে দেওয়া হবে না। প্রধান সড়ক থেকে গোটা রাজবন বিহার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন রাখা হবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের তীব্র নজরদারি রয়েছে।